"          "!
প্রীতি নিও, শুরুটা তোমাকে চমকে দিয়েছে হয়তো। আমি আর কিইবা লিখতে পারি! কারণ তুমি আমার কি ছিলে সেটা আমার কাছে এখনো অস্পষ্ট। আর এখন তুমি কে বা কি সেটাও অসংজ্ঞায়িত। সুতরাং  কি সম্বোধন করব তা আমার বোধের বাইরে।
 
তোমার সময় ভালোয় কাটে এবং তা-ই হোক। আমারও খারাপ যায়না। জগতের অন্য সবার থেকে আমার সুখে থাকার সংজ্ঞাটা ভিন্ন, সেটা আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবেও না। তবে আমি অনেকটা ভাবুক, ভাবি সবকিছু নিয়ে। তুমি হয়ত নাও ভাবতে পারো আর এখানেই তোমার আমার ফারাক।
 
তোমার চলে যাওয়া আমাকে বিস্মিত করেনি এবং পীড়াও দেয় না। চলে যাওয়া এই ধরার অমোঘ নিয়ম, তুমিও ধরাধামেরই অংশ। আমি এভাবেই সবকিছুকে ব্যাখ্যা করি।
অবশ্য তুমি চলে গেছো না আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি এটাও অমিমাংসিত, আমাদের শেষ সুতোয় না হয় থাকলো কিছু ধোঁয়াশা।

আমার কিছু বিচিত্র, ব্যতিক্রমি চিন্তা আছে। জীবনে কারো সাথে পরিচয় হওয়া বা কারো সাথে সম্পর্ক হওয়াকে আমি ভুল মনে করিনা। প্রচলিত কথা; অনেকেই বলে, ভুলভাবে পরিচয় হয়েছিল। আমি এর বিরোধী। আমার কাছে কারো সাথে পরিচয় হওয়ার মানে, হয় সে আমার আপনজন হবে নয়তো তার আচারব্যবহার থেকে রয়েছে আমার জন্য শিক্ষা। তোমার চলে যাওয়াটা আমার জন্য শিক্ষা; কাউকে তার প্রাপ্যের বেশি ভালোবাসা দিতে নেই।
আমি তর্ক পছন্দ করিনা, কোনদিন তুমি ফিরে এলে আমি যদি তোমাকে গ্রহন করি তখনো তোমার সাথে এ নিয়ে আমি তর্ক করবো না। হ্যা, অভিমান হতে পারে, যাদেরকে আমি ভালোবাসি তাদের সাথে অভিমান করি। আর যাদের সাথে রাগ করি তাদেরকে আমি পছন্দ করিনা, আর তাই কখনো কারো সাথে আমি আমার রাগ প্রকাশ করিনা; কারণ যাকে পছন্দ করিনা তাকে রাগ দেখিয়ে কি লাভ!

জীবনের অনেক কাজ, সিদ্ধান্তই আমাদের একেরটা অন্যের পছন্দ হয়না, এটাই স্বাভাবিক। জগতের কোন কোন বিজ্ঞজন তো আরেকটু এগিয়ে গিয়ে এ বিষয়ে বলছেন, "পৃথিবীতে সত্য-মিথ্যা কিংবা ন্যায়-অন্যায় বলতে কিছু নেই, সব দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।" আমি অবশ্য তাদের মত এত কট্টরপন্থী না। "আপনার সাথে আমার সব মতের মিল নাও হতে পারে কিন্তু অবশ্যই আপনার মতকে সম্মান করি" আমি এই মতে বিশ্বাসী। আর মনে করি এইমতে বিশ্বাসী লোক কাউকে ঠকায় না বা কারো মনে আঘাত করেনা।

এসব থাক, আমি আপনাকে খুব মিস করি আর এজন্যই লিখছি এসব; বিষয়টা এরকম না। গত হওয়া কাউকে আমি আমার কোন কিছুর অংশীদার করিনা, না সম্পর্কের, না আমার কষ্টের, না আমার ভাবনা চিন্তার। আমি কেবল আমার নিজেকে নিয়েই ভাবি আর নিজের ভুলগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। আমার ভুলের পর্যালোচনা থেকেই এসব লেখা।
আরেকটা মজার জিনিস বলে রাখি, আমার থেকে গত হওয়া অনেকজনই এই লেখা দেখলে মনে করবে তাকে নিয়েই আমার এ লেখা; কাকে নিয়ে লিখছি সেটা আমার আর আমার রবের মাঝেই থাকুক। অন্যদের কাছে না হয় এটা ধাঁধা হিসেবেই থাকলো।
 
আমার থেকে যারাই গত হয়েছে, তাদের কারো জন্যই আমার অনুরাগ, ভালোবাসা, আফসোস কিংবা হিংসা বা করুণা কিছুই নেই। তাদের জন্য কখনোই আমি ভাবিনা, আমি কেবল ভাবি এটা নিয়ে যে তার থেকে, তার চলে যাওয়া থেকে আমার কি শিক্ষা আছে। শিখার আগ্রহ আমার প্রবল। জীবনের পুরোটাই একটা নাট্যমঞ্চ হিসেবে মনে করি, এখানে সবাই অভিনয় করে; আর তাই এসব শিক্ষাকে আমি আমার স্ক্রিপ্ট মনে করি। এগুলাই তো আমার পরবর্তী পর্বের দৃশ্য, আমাকে এ অনুযায়ীই সংলাপ বলতে হবে, আমার অভিনয়টা সেরকমই হতে হবে। সে চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত আর আমার জীবনেই আমি শিক্ষা খুঁজি।

জীবনে অনেকের সাথেই দেখা হবে, কথা হবে, হবে পরিচয় কিংবা কাছে আসা। তাদের থেকে কজন পথের শেষমাথা পর্যন্ত সঙ্গ দেয় সেটাই মুখ্য। খুবই অল্প, অল্প কজন লোকই কেবল শেষের সাথী হতে পারে। আর এ কথাটি আমার খেয়ালে থাকে সবসময়; সেজন্য তুমি কিংবা অন্য কারো চলে যাওয়া আমাকে কাঁদায় না কখনোই। কাঁদাতে তো পারেই না বরং সামান্য দুঃখবোধ ও হয়না।
 
আমি এমনই, এরকমই আমি। হয়তো আমার কোমলতা বেশি প্রকাশ পায়, আমার মাঝে যতটুকু কোমলতা আছে ঠিক ততটুকুন কঠোরতাও আমি বয়ে বেড়াই। হয়তো কঠোরতাকে কোমলতার আবরণে ঢেকে রাখি। কিন্তু আমি জানি আমি কত কঠোর আর কত কোমল!

তবে এটুক বলতে পারি, রাগ অনুরাগ যাই হোক, আমি মন থেকে কখনোই কারো অমঙ্গল চাই না। সুখী হোক সবাই, সুখে থাকুক সবাই, সুখ নিয়েই থাকুক সবাই।

আল্লাহ জগতের সকল প্রানীকে শান্তিতে রাখুক এই-ই তো কামনা চিরন্তন।


রোজনামচা
সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২১-১১-২০১৮


Post a Comment

 
Top