পরিক্ষা থাকায় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতে হল। ৮টা বাজতেই পত্রিকা দিয়ে গেল হকার; ছোটবেলা থেকেই অনুসন্ধিৎসু মন, পত্রিকা
আসা মাত্রই হাতে নিয়ে পড়া শুরু। পরিক্ষার সকাল তো কি হয়েছে! রবিন অবশ্য কোনদিকে তাকানোর ও প্রয়োজন মনে করেনা পড়তে বসলে। দুজনের পরিক্ষা এবার একই তারিখে পড়েছে। অবশ্য ওর কোর্সগুলো এরকমই,
চাইলেও এদিকওদিক তাকানোর ফুরসত নেই। প্রচুর
পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাকে। সে তুলনায় আমি রিলাক্সে আছি বলা যায়। কিছুক্ষণ পর নাস্তা সারলাম। রবিন যথারীতি টেবিলেই, ওর
নাস্তারও সময় নেই।
প্রস্তুতি শেষ করে ১:৩০ টার আগে পরিক্ষার হলে হাজির হলাম। প্রথম পরিক্ষার দিনে আমার সীট পড়েছিল একেবারে সামনের টেবিলে। সামনে পড়লে সমস্যা হয় আমার। না কারো সাহায্য নিতে পারিনা এজন্য নয়; স্যারদের কথা বলা আমার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। যাক, আজকে সীট পড়েছে পিছনের দিকে।
আজকের পরিক্ষায় একটি প্রশ্ন এসেছে جناس নিয়ে। এটিকে ইংরেজি সাহিত্যে PUN বলে। বাংলায় এর পরিভাষা কি খুঁজে পাইনি। প্রয়াত শিক্ষাবিদ ড. কবীর চৌধুরী তার 'সাহিত কোষ' বইয়ে এর ব্যাখায় PUN এর প্রতিশব্দ লিখেছেন শব্দ নিয়ে ক্রীড়া কৌতুক। সেদিন নজিবের সাথে বাংলায় এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমার সাথে দ্বিমত হচ্ছিল। পরে জারির থেকে জেনে নিয়েছিলাম, আমার মতটা ভুল নয়।
ইংরেজিতে PUN এর ব্যবহার দেখাতে গিয়ে নজিব সেদিন শেকসপিয়র এর 'অথেলো'র কথা বলছিল। আমার তখন মনে পড়ে গেলো বাংলা ছন্দের জাদুকর সুকুমার রায় এর কথা, তার একটি কবিতা আছে এরকম-
"এক ছিল দাঁড়ি মাঝি-দাড়ি তার মস্ত
দাড়ি দিয়ে দাঁড়ি তার দাঁড়ে খালি ঘষত।
সেই দাঁড়ে একদিন দাঁড়কাকে দাঁড়াল
কাঁকড়ার দাঁড়ি দিয়ে দাঁড়ি তারে তাড়াল।"
পবিত্র কোরআনে এর ব্যবহার আছে
ويوم تقوم الساعةيقسم المجرمون، ما لبثوا غير ساعة كذالك كانوا يؤفكون
এরকম আরো অনেক ব্যবহার আছে কোরআনে।
কি সুন্দর! আরবী আর ইংরেজিতে একই ধরণের সংজ্ঞা দেয়া আছে জিনাসের (PUN)। শুনতে একইরকম শব্দ কিন্তু প্রতিটি আলাদা জায়গায় আলাদা অর্থ দেয়।বাংলায় এর বিশেষ নাম কি তা জানা হয়নি এখনো।
আজকের পরিক্ষার আরেকটি বিষয় ছিল السجع বা অনুপ্রাস। ইংরেজিতে যাকে বলে Alliteration
এটি সাহিত্যের আরেকটি মজার বিষয়। ৪র্থ সেমিস্টারে ড. সিদ্দিকুর রহমান নিজামি স্যার ভাষাতত্ত্ব পড়াতে গিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আবার ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে অলঙ্কার শাস্ত্রে এর দেখা পেলাম। কোর্স টিচার ড. আরশাদুল হাসান স্যার অত্যন্ত দক্ষ টিচার। ডিপার্টমেন্ট এ রকম আরো স্যারের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দুজন স্যারই খবু ভালো করে বুঝিয়েছেন বিষয়টা। বাক্যের বিভিন্ন অংশের শেষের ধ্বনিগত মিলকে অনুপ্রাস বলে। কোরআনে এর ব্যবহার দেখা যায় ব্যাপক, যেমন
إن إلينا إيابهم، ثم إن علينا حسابهم.
এটা নিয়ে আলোচনা করার সময় নজিব বলেছিল এর সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে হানিফ সংকেতের বক্তব্য। সত্যিই আধুনিক কালে অনুপ্রাস চর্চায় হানিফ সংকেত অনন্য।
এটা মূলত গদ্যের বিষয়, কিন্তু কবিতায় ও এর ব্যবহার লক্ষণীয়। বাংলা কবিতায় অনুপ্রাস প্রসঙ্গে কথা বললে সবার আগে মনে পড়ে জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত লাইন-
"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার দিশা।"
কবিগুরুর লেখা আমার প্রিয় কবিতাগুলোর মাঝে একটি 'পুরনো ভৃত' কবিতাটি। এর মাঝেও অনুপ্রাসের সুন্দর ব্যবহার লক্ষণীয়-
"আমি শুধু হাসি, আঁখিজিলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে,
তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে! "
সুকুমার রায়ের লেখায় এর দেদার দেখা পাওয়া যায়, যেমন তার বিখ্যাত ছড়া আবোলতাবোল এ লিখেছেন-
"আয়রে ভোলা, খেয়াল-খোলা স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল, আবোল-তাবোল মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।"
আজকের পরিক্ষার আরেকটি বিষয় ছিল আরবী ছন্দ। আমি যদিও কবিতাপ্রিয় মানুষ কিন্তু এই বিষয়টা অন্য সবার মত আমার কাছেও বিরক্তিকর মনে হয়েছে।
যাই হোক,পরিক্ষা ভালোই হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। পরিক্ষা দিয়ে এসে রুমে ঢুকেছি ৫টার দিকে, আর বের হইনি। ৬টার দিকে পেটে ক্ষিদে অনুভব করায় ভাবলাম নজিবকে নিয়েই নাস্তা করতে যাই। আমাদের এই এক অভ্যাস একজনের ক্ষিদে লাগলে আরেকজন কে নিয়েই খেতে যাই, ব্যতিক্রম হয় খুব কম। রুমে গিয়ে দেখলাম ওর টেবিলে অলটাইম এর কেক এর ছেঁড়া প্যাকেট। বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে ও মাত্র নাস্তা সেরেছে। আমার ক্ষিদের কথা ভুলে দুজনে যথারীতি গল্প শুরু। কিছুক্ষণ পরই ও আমার হাতে তুলে দিল একটা হানিকম্ব এর প্যাকেট। আমার তখন নাস্তার কথা মনে পড়ল, আমাদের মাঝে এমন কাকতালীয় ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
(নজিব; আমার ভাইয়ের মত বন্ধু, বন্ধুর মত ভাই। এ ক্যাম্পাসে আমার প্রিয় একজন মানুষ। তার সাথে আমার সম্পর্ক হচ্ছে হুব্বু ফিল্লাহ। সাধারণ বাসায় যেটাকে বলে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। এটার নাকি সাহিত্যিক টার্ম "প্লেটোনিক লাভ"। বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। সন্ধ্যায় নজিবের সাথে গল্প করতে গিয়ে জানা হয়ে গেল।)
নজিবের থেকে আমি শিখেছি অনেক কিছু এবং শিখে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। চিন্তার বিশুদ্ধতার জন্য ওর থেকে ভালো কারো সঙ্গ আমি এখনো পাইনি। ও আমাকে কবিতা শিখিয়েছে, বানিয়েছে কবিতাপ্রেমী। ওর কাছে শিখি প্রতিনিয়ত অনেক কিছুই, বিশ্বসাহিত্যের নানা অলিগলির সাথে সাক্ষাত করায় রোজ। স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায়, সাহস জোগায় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে। আমরা স্বপ্ন দেখি সবুজের, সবুজ আগামীর।
দুজনে কথা বলছিলাম আজকের পরিক্ষার টপিক নিয়ে, সেখান আবুল আলা মাআররি হয়ে আরবী সাহিত্যের কবিগুরু আহমদ শাওকি হয়ে হুমায়ুন আহমেদে এসে পৌঁছাই। আমরা কথা শুরু করলে কেমন যেন এভাবেই ঘুরে বেড়াই। নজিব অবশ্য বলে সাহিত্যের ছাত্ররা তুলনামূলক সাহিত্য না পড়লে পূর্ণতা আসে না।
জারির, আমার ভালো লাগার আরেকজন মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এর ছাত্রদের মাঝে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাকের কারণে অনেক হতাশা বা দুঃখবোধ আছে। আমার ও অনেক প্রত্যাশা প্রাপ্তির সাথে মিলেনি। কিন্তু নজিব, জারির এদের মত জ্ঞানপিপাসুদের সঙ্গলাভ আমার অনেক প্রাপ্তি-ই বলতে পারি। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুক আর জ্ঞান বৃদ্ধি করুক।
রাতে দিনলিপি লিখতে বসার পর মনে পড়ে এই ক্যাম্পাসে কত মানুষের সাথেই ত পরিচয় হল, আড্ডা হল, বন্ধুত্ব হল। কাদের দ্বারা আমার উপকার হল আর কাদের দ্বারা আমার ক্ষতি হল! এই চিন্তা বিচিত্র মনে হতে পারে কারো কাছে। কিন্ত আমার কাছে এই চিন্তার মূল্য অনেক। সেই ছোটবেলা থেকে আমার ভাই আমকে বারবার এই কথাটি বোঝাতেন, "এমন মানুষের সাথে চলবা যাদের থেকে তোমার উপকার হয়, যাদের থেকে তোমার কিছু শেখার আছে তাদের সাথে চলবা।" কথাটা সবসময় মনে না থাকলেও প্রায়ই এটা মনে করি আর হিসেব করি।
উপরোক্ত দুজন ছাড়াও আরেকজন হল তালহা, আমার স্বদেশী (এলাকার)। ক্যাম্পাসে অনেক বন্ধু, সুহৃদ থাকলেও এদেরকে আমি আলাদা হিসেবে রাখি। আল্লাহ এদের কে আরো ভালো রাখুন।
"দিনলিপি"
পিনিক জোন, বিজয় একাত্তর হল।
২৯-১১-২০১৮
প্রস্তুতি শেষ করে ১:৩০ টার আগে পরিক্ষার হলে হাজির হলাম। প্রথম পরিক্ষার দিনে আমার সীট পড়েছিল একেবারে সামনের টেবিলে। সামনে পড়লে সমস্যা হয় আমার। না কারো সাহায্য নিতে পারিনা এজন্য নয়; স্যারদের কথা বলা আমার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। যাক, আজকে সীট পড়েছে পিছনের দিকে।
আজকের পরিক্ষায় একটি প্রশ্ন এসেছে جناس নিয়ে। এটিকে ইংরেজি সাহিত্যে PUN বলে। বাংলায় এর পরিভাষা কি খুঁজে পাইনি। প্রয়াত শিক্ষাবিদ ড. কবীর চৌধুরী তার 'সাহিত কোষ' বইয়ে এর ব্যাখায় PUN এর প্রতিশব্দ লিখেছেন শব্দ নিয়ে ক্রীড়া কৌতুক। সেদিন নজিবের সাথে বাংলায় এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমার সাথে দ্বিমত হচ্ছিল। পরে জারির থেকে জেনে নিয়েছিলাম, আমার মতটা ভুল নয়।
ইংরেজিতে PUN এর ব্যবহার দেখাতে গিয়ে নজিব সেদিন শেকসপিয়র এর 'অথেলো'র কথা বলছিল। আমার তখন মনে পড়ে গেলো বাংলা ছন্দের জাদুকর সুকুমার রায় এর কথা, তার একটি কবিতা আছে এরকম-
"এক ছিল দাঁড়ি মাঝি-দাড়ি তার মস্ত
দাড়ি দিয়ে দাঁড়ি তার দাঁড়ে খালি ঘষত।
সেই দাঁড়ে একদিন দাঁড়কাকে দাঁড়াল
কাঁকড়ার দাঁড়ি দিয়ে দাঁড়ি তারে তাড়াল।"
পবিত্র কোরআনে এর ব্যবহার আছে
ويوم تقوم الساعةيقسم المجرمون، ما لبثوا غير ساعة كذالك كانوا يؤفكون
এরকম আরো অনেক ব্যবহার আছে কোরআনে।
কি সুন্দর! আরবী আর ইংরেজিতে একই ধরণের সংজ্ঞা দেয়া আছে জিনাসের (PUN)। শুনতে একইরকম শব্দ কিন্তু প্রতিটি আলাদা জায়গায় আলাদা অর্থ দেয়।বাংলায় এর বিশেষ নাম কি তা জানা হয়নি এখনো।
আজকের পরিক্ষার আরেকটি বিষয় ছিল السجع বা অনুপ্রাস। ইংরেজিতে যাকে বলে Alliteration
এটি সাহিত্যের আরেকটি মজার বিষয়। ৪র্থ সেমিস্টারে ড. সিদ্দিকুর রহমান নিজামি স্যার ভাষাতত্ত্ব পড়াতে গিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আবার ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে অলঙ্কার শাস্ত্রে এর দেখা পেলাম। কোর্স টিচার ড. আরশাদুল হাসান স্যার অত্যন্ত দক্ষ টিচার। ডিপার্টমেন্ট এ রকম আরো স্যারের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দুজন স্যারই খবু ভালো করে বুঝিয়েছেন বিষয়টা। বাক্যের বিভিন্ন অংশের শেষের ধ্বনিগত মিলকে অনুপ্রাস বলে। কোরআনে এর ব্যবহার দেখা যায় ব্যাপক, যেমন
إن إلينا إيابهم، ثم إن علينا حسابهم.
এটা নিয়ে আলোচনা করার সময় নজিব বলেছিল এর সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে হানিফ সংকেতের বক্তব্য। সত্যিই আধুনিক কালে অনুপ্রাস চর্চায় হানিফ সংকেত অনন্য।
এটা মূলত গদ্যের বিষয়, কিন্তু কবিতায় ও এর ব্যবহার লক্ষণীয়। বাংলা কবিতায় অনুপ্রাস প্রসঙ্গে কথা বললে সবার আগে মনে পড়ে জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত লাইন-
"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার দিশা।"
কবিগুরুর লেখা আমার প্রিয় কবিতাগুলোর মাঝে একটি 'পুরনো ভৃত' কবিতাটি। এর মাঝেও অনুপ্রাসের সুন্দর ব্যবহার লক্ষণীয়-
"আমি শুধু হাসি, আঁখিজিলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে,
তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে! "
সুকুমার রায়ের লেখায় এর দেদার দেখা পাওয়া যায়, যেমন তার বিখ্যাত ছড়া আবোলতাবোল এ লিখেছেন-
"আয়রে ভোলা, খেয়াল-খোলা স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল, আবোল-তাবোল মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।"
আজকের পরিক্ষার আরেকটি বিষয় ছিল আরবী ছন্দ। আমি যদিও কবিতাপ্রিয় মানুষ কিন্তু এই বিষয়টা অন্য সবার মত আমার কাছেও বিরক্তিকর মনে হয়েছে।
যাই হোক,পরিক্ষা ভালোই হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। পরিক্ষা দিয়ে এসে রুমে ঢুকেছি ৫টার দিকে, আর বের হইনি। ৬টার দিকে পেটে ক্ষিদে অনুভব করায় ভাবলাম নজিবকে নিয়েই নাস্তা করতে যাই। আমাদের এই এক অভ্যাস একজনের ক্ষিদে লাগলে আরেকজন কে নিয়েই খেতে যাই, ব্যতিক্রম হয় খুব কম। রুমে গিয়ে দেখলাম ওর টেবিলে অলটাইম এর কেক এর ছেঁড়া প্যাকেট। বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে ও মাত্র নাস্তা সেরেছে। আমার ক্ষিদের কথা ভুলে দুজনে যথারীতি গল্প শুরু। কিছুক্ষণ পরই ও আমার হাতে তুলে দিল একটা হানিকম্ব এর প্যাকেট। আমার তখন নাস্তার কথা মনে পড়ল, আমাদের মাঝে এমন কাকতালীয় ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
(নজিব; আমার ভাইয়ের মত বন্ধু, বন্ধুর মত ভাই। এ ক্যাম্পাসে আমার প্রিয় একজন মানুষ। তার সাথে আমার সম্পর্ক হচ্ছে হুব্বু ফিল্লাহ। সাধারণ বাসায় যেটাকে বলে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। এটার নাকি সাহিত্যিক টার্ম "প্লেটোনিক লাভ"। বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। সন্ধ্যায় নজিবের সাথে গল্প করতে গিয়ে জানা হয়ে গেল।)
নজিবের থেকে আমি শিখেছি অনেক কিছু এবং শিখে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। চিন্তার বিশুদ্ধতার জন্য ওর থেকে ভালো কারো সঙ্গ আমি এখনো পাইনি। ও আমাকে কবিতা শিখিয়েছে, বানিয়েছে কবিতাপ্রেমী। ওর কাছে শিখি প্রতিনিয়ত অনেক কিছুই, বিশ্বসাহিত্যের নানা অলিগলির সাথে সাক্ষাত করায় রোজ। স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায়, সাহস জোগায় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে। আমরা স্বপ্ন দেখি সবুজের, সবুজ আগামীর।
দুজনে কথা বলছিলাম আজকের পরিক্ষার টপিক নিয়ে, সেখান আবুল আলা মাআররি হয়ে আরবী সাহিত্যের কবিগুরু আহমদ শাওকি হয়ে হুমায়ুন আহমেদে এসে পৌঁছাই। আমরা কথা শুরু করলে কেমন যেন এভাবেই ঘুরে বেড়াই। নজিব অবশ্য বলে সাহিত্যের ছাত্ররা তুলনামূলক সাহিত্য না পড়লে পূর্ণতা আসে না।
জারির, আমার ভালো লাগার আরেকজন মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এর ছাত্রদের মাঝে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাকের কারণে অনেক হতাশা বা দুঃখবোধ আছে। আমার ও অনেক প্রত্যাশা প্রাপ্তির সাথে মিলেনি। কিন্তু নজিব, জারির এদের মত জ্ঞানপিপাসুদের সঙ্গলাভ আমার অনেক প্রাপ্তি-ই বলতে পারি। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুক আর জ্ঞান বৃদ্ধি করুক।
রাতে দিনলিপি লিখতে বসার পর মনে পড়ে এই ক্যাম্পাসে কত মানুষের সাথেই ত পরিচয় হল, আড্ডা হল, বন্ধুত্ব হল। কাদের দ্বারা আমার উপকার হল আর কাদের দ্বারা আমার ক্ষতি হল! এই চিন্তা বিচিত্র মনে হতে পারে কারো কাছে। কিন্ত আমার কাছে এই চিন্তার মূল্য অনেক। সেই ছোটবেলা থেকে আমার ভাই আমকে বারবার এই কথাটি বোঝাতেন, "এমন মানুষের সাথে চলবা যাদের থেকে তোমার উপকার হয়, যাদের থেকে তোমার কিছু শেখার আছে তাদের সাথে চলবা।" কথাটা সবসময় মনে না থাকলেও প্রায়ই এটা মনে করি আর হিসেব করি।
উপরোক্ত দুজন ছাড়াও আরেকজন হল তালহা, আমার স্বদেশী (এলাকার)। ক্যাম্পাসে অনেক বন্ধু, সুহৃদ থাকলেও এদেরকে আমি আলাদা হিসেবে রাখি। আল্লাহ এদের কে আরো ভালো রাখুন।
"দিনলিপি"
পিনিক জোন, বিজয় একাত্তর হল।
২৯-১১-২০১৮
Post a Comment